যা শিখতে পারবে
চুম্বক কি?
চুম্বক বা ম্যাগনেট যে জিনিস দিয়ে তৈরি হয় সে জিনিসগুলোকে আমরা যদি চিন্তা করি ছোট ছোট তীরের মতন তাহলে ম্যাগনেট এর ভিতরে এই ছোট ছোট তীরগুলো একি দিকে মুখ করে থাকে। কিন্তু পৃথিবীতে আর এমন কোন বস্তু নেই সে যেটা থেকে তৈরি সেগুলো একই দিকে মুখ করা থাকে। চুম্বক তার আশেপাশে একটা চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। যেটা চোখে দেখা যায় না, একে বলা হয় চৌম্বক ক্ষেত্র । এই চৌম্বক ক্ষেত্রটি লোহা, নিকেল ও কোবাল্ট এর মতো কিছু ধাতুকে আকর্ষণ করতে পারে।
ভিডিওঃ আয়রনের গুড়াগুলো প্রথমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, কিন্তু ম্যাগনেটের কাছে আসতেই তারা সবাই একসাথে একই দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে গেল। এই ঘটনাই আয়রনের চুম্বকীয় ধর্মের প্রমাণ। পৃথিবীর অন্য কোনো বস্তু, চুম্বক ছাড়া, এমন ধর্ম প্রদর্শন করে না।
চুম্বক আবিষ্কার করেন কে এবং কোথায়?
চুম্বক আবিষ্কারের ইতিহাস/ চুম্বক কে আবিষ্কার করেন: চুম্বকের আবিষ্কার প্রাচীন গ্রিসে। ধারণা করা হয়ে থাকে যে প্রায় ২৫০০ বছর আগে চুম্বকের অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষ জানতে পারে। তখন প্রকৃতিতে এক ধরনের পদার্থ পাওয়া যেত যাকে লোডস্টোন বা প্রাকৃতিক চুম্বক বলা হয়ে থাকে। এই চুম্বক লোহার প্রতি আকৃষ্ট হতো এখান থেকে চুম্বকের ধারণা তৈরি হয়। উইলিয়াম গিলবার্ট নামে একজন ইংরেজ বিজ্ঞানী যিনি সর্বপ্রথম এই চুম্বকের ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক ভাবে ব্যাখ্যা করে।
চুম্বক কিভাবে তৈরি হয়?
চুম্বক সাধারনত দুই ভাবে তৈরি হয়। প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এই ধরনের চুম্বক। এবং কৃত্রিম ভাবে আমরা চুম্বক তৈরি করতে পারি। এই কৃত্রিম চুম্বক তৈরির দুটি প্রধান উপায় করা যায়:
ঘষার মাধ্যমে: একটি ধাতুর টুকরোটিকে অন্য চুম্বক দিয়ে ঘষে চুম্বকে পরিণত করা যায়। এই পদ্ধতিতে চুম্বক দিয়ে লোহা বা ইস্পাতের টুকরো বারবার একই দিকে ঘষানো হয়, তখন ভিতরের কনা বা ডোমেইন গুলো একই দিয়ে মুখ করে ফেলে বা সারিবদ্ধ হতে শুরু করে। একবার সারিবদ্ধ হলে সেটা চুম্বকে পরিনত হয় ।
চল পরীক্ষার মাধ্যমে এটা প্রমাণ করি:
প্রথমে বস্তুতে কোন ম্যাগনেট ছিল না। দ্বিতীয় চিত্র দেখো দ্বিতীয় বস্তুতিতে যে কণাগুলো আছে তারা একই দিকে মুখ করে যার ফলে ম্যাগনেট বা চুম্বক তৈরি হয়।
বিদ্যুৎ দ্বারা: এই পদ্ধতিতে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। লোহার একটি টুকরার চারপাশে আবৃত তারের কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহ প্রবাহিত হলে, একটি লোহাকে চুম্বকে পরিণত করে।
চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে কেন?
লোহার মতো বস্তু ডোমেন নামক ক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি হয় । এই কণাগুলো ক্ষুদ্র চুম্বকের মতো কাজ করে। সাধারণত, লোহার ভিতরে এই কণাগুলো বিভিন্ন দিকে মুখ করে থাকে যার ফলে তারা কাউকে আকর্ষণ করে না। তারা নিজেদের মধ্যে অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। কিন্তু যখনই কোনো চুম্বকের কাছে একটি ধাতুর টুকরা আনা হয়, তখন চুম্বকীয় বল এই ডোমেনগুলিকে এক সারিতে সাজায়। এই কারণে ধাতুটি চৌম্বক হয়ে ওঠে এবং চুম্বক প্রতি আকৃষ্ট হয়।
চুম্বক কেন উত্তর দক্ষিণ দিক মুখ করে থাকে?
একটা চুম্বকের দুইটি মেরু থাকে একটা হচ্ছে উত্তর মেরু আরেকটা হচ্ছে দক্ষিণ মেরু। যখন একটি চুম্বকের দক্ষিণ মেরুর কাছে আরেকটা চুম্বকের দক্ষিণ মেরু আনা হয় তখন একে অপরকে বিকর্ষণ করে।
তোমরা কি একটা জিনিস খেয়াল করেছো, চুম্বককে তুমি যেদিকেই মুখ করে রাখো না কেন এটা সব সময় উত্তর দক্ষিণ মুখ করে থাকে যদি এটা ফ্রিলি মুভ করতে পারে। তাহলে পৃথিবীকে যদি একটা চুম্বকক্ষেত্র মনে কর যার একটা দক্ষিণ এবং উত্তর মেরু রয়েছে। এই চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে যদি আরেকটি চুম্বক রাখো সেই চুম্বক উত্তর ও দক্ষিণের মুখ করে থাকবে। তাহলে বুঝা যায় পৃথিবী নিজেই একটা চুম্বক।
চুম্বক দিয়ে কম্পাস তৈরি
পৃথিবীর এই চুম্বক ধর্মকে কাজে লাগিয়ে আমরা বাসায় সহজেই একটা কম্পাস তৈরি করতে পারি ! চলো দেখা যাক কিভাবে কম্পাস তৈরি করতে হবে।
যা যা প্রয়োজন:
- একটি ছোট বার চুম্বক নিউডিমিয়াম ম্যাগনেট
- এক বাটি জল
- কর্ক বা ফোমের একটি ছোট টুকরা
নির্দেশাবলী:
কম্পাস প্রস্তুতি: কর্ক বা ফোমের একটি ছোট টুকরা কেটে নিবে যা জলের উপর ভাসতে পারে। এর ওপর ছোট চুম্বক বসাবো। এখন মোবাইল দিয়ে উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম নির্ধারণ করে চুম্বকের দিকগুলো চিত্রনুসারে লিখে ফেলতে হবে। খেয়াল করি-—চুম্বক ধীরে ধীরে ঘুরবে এবং উত্তর দক্ষিন দিকে নির্দেশ করবে!