
আপনার সন্তানের উপরে তীব্র রাগ বা ক্রোধ অনুভব করেন যার ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করে বসেন সন্তানদের সাথে যা তাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। মায়েদের রাগ নিয়ন্ত্রণ বা ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ সন্তানদের জন্য বিপর্যয়র কারন হয়ে দাড়াতে পারে। আমি এইভাবে খুশি যে আপনি প্যারেন্টস হিসেবে এখানে টিপস করছেন কিভাবে আপনার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করবেন যখন আপনার সন্তান আপনার কথা শুনছে না। এখানে আমি আপনাদের সাথে ১৩ টা রাগ নিয়ন্ত্রণ করার টিপস শেয়ার করছি; শেষেরটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ
সন্তানের উপর কথায় কথায় রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখবেন যেভাবে
১৩. রাগের উৎপত্তি:
প্রথমেই জেনে নেই রাগ কি এবং রাগের উৎপত্তি কোথা থেকে হয় তাহলে আপনার পরিস্থিতি সামলাতে অনেক সাহায্য করবে। আমাদের মস্তিষ্ক প্রাকৃতিকভাবে হুমকির প্রতি সাড়া দেয়। কোনো কিছু আমাদের হুমকি দেয়ার সাথে সাথে আমরা ফাইট-অর-ফ্লাইট মোডে চলে যাই। এই প্রতিক্রিয়া রাগের সাথে খুবই সম্পর্কিত কারণ সাধারণত রাগ একটি লড়াইয়ের প্রতিক্রিয়া। কিন্তু প্যারেন্টিং ক্ষেত্রে এটি সহায়ক নয় কারণ লড়াই করলে সমস্যা আরো বৃদ্ধি পায়।
১২. নিজের যত্ন নিন:
একটা ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করি আমরা যখন প্লেনে ভ্রমণ করি তখন যদি অক্সিজেনের পরিমাণ কেবিনে কমে যায় তাহলে কেবিন ক্রু আমাদেরকে মাস্ক পড়তে বলে। তবে সে আগে মাস্ক পড়ে তারপর অন্যদের সাহায্য করুন। কেন? কারণ আপনি অজ্ঞান হয়ে গেলে অন্যদের সাহায্য করতে পারবেন না। একইভাবে, প্যারেন্টসদের আগে নিজেদের যত্ন নেওয়া দরকার। এটি মানসিক এবং শারীরিক উভয় দিকেই হতে পারে। আপনার সন্তানদের জন্য সর্বোত্তম উপহার হল একটি গুড প্যারেন্টিং।
১১. সন্তানের সাথে সংশ্লিষ্ট প্যারেন্টসদের দিকে খেয়াল রাখুন:
মূলত সন্তানের প্যারেন্টস তার বাবা-মা হলেও বাকি যারা আছেন যেমন পরিবারের সদস্য, পেডিয়াট্রিশিয়ান, শিক্ষক – এরা সবাই প্যারেন্টিনের একটি অংশ। কথায় আছে একটি শিশুকে লালন-পালন করতে একটি গ্রাম লাগে, তাই সেই গ্রামটিকে যত্ন নিন।
১০. শিশু উন্নয়ন সম্পর্কে জ্ঞান:
আমাদের অনেকেরই বয়স অনুসারে আমাদের বাচ্চাদের যে আচরণ হওয়া উচিত বা যে এই ধরনের উন্নয়ন হওয়া উচিত তার সম্পর্কে জ্ঞান থাকে না। তাই আমাদের সকলের নিয়মিত আর্টিকেল পড়া উচিত। এতে করে আপনার একটা মাইন্ড সেট তৈরি হবে যা আপনার সন্তানের বয়সের অনুসারে তাদের আচরণগুলো স্বাভাবিক মনে হবে আপনার কাছে । এই দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে রাগান্বিত হওয়া থেকে দূরে রাখবে। সেই সাথে আমাদের জানা উচিত সন্তানদের কিভাবে গ্রোথ মাইন্ড সেট তৈরি করবেন
৯. “সব কিছু যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমনই হচ্ছে” নিজেকে বলুন
যখন আমরা মনে করি যে জিনিসগুলি ঠিকমতো চলছে না, তখনই রাগ আসে। কিন্তু যদি আমরা মনে করি যে জিনিসগুলি ঠিকমতো চলছে, তাহলে রাগের স্থান থাকবে না। তাই প্রতিদিন নিয়মিত ৫-১০ বার “সবকিছু যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমনি হচ্ছে” এ কথাটি বলুন। রাগ নিয়ন্ত্রণে মহানবী (সা.) যা বলেছেন
রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে ব্যক্তি কুস্তি লড়ে অন্যকে ধরাশায়ী করে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিই শক্তিশালী, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৮০৯)
৮.প্যারেন্টিং এর এই যাত্রাটা উপভোগ করুন:
যে জিনিস নিয়ে আমি আপনি সারাক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি করতাম যেমন ধরেন ঘর অগোছালো করা, জিনিসপত্র ভেঙে ফেলা, পানি ফেলে দেওয়া নানান ব্যাপারে আমরা রাগান্বিত হই। কিন্তু কষ্টের কথা কি জানেন চোখের পলকে এই সময়টা একদিন চলে যাবে। প্যারেন্টিং এবং শিশু উন্নয়নের প্রতিটি ধাপ আনন্দদায়ক এবং মজাদার হতে পারে। আপনি যখন রাগান্বিত হবেন তখন যদি এই কথাটা মনে রাখেন দেখবেন আপনার সন্তানের প্রতিটি পর্যায়ে আপনি উপভোগ করছেন।
৭. দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টান জীবন পাল্টে যাবে:
আসলে দৃষ্টিভঙ্গিই সব। আমরা একটা ঘটনাকে যেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি আমাদের ব্রেন ঠিক ওইভাবে দেখার জন্য যে সমস্ত প্রমাণ লাগে তা সব হাজির করে। আর এই দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভর করে প্যারেন্টিং স্টাইলের উপর। আমরা অনেক সময় আমাদের সন্তানদের কার্যকলাপে খুব বিরক্ত হই এ বিরক্ত বোধ আসে কারণ আমরা ভাবি যে এত দুষ্টুমি সে কেন করছে!! একজন মা এবং বাবা বিছানায় শুয়ে কথা বলছিলেন। বাবাটি তার ছেলেদের সম্পর্কে বিরক্ত ছিলেন। তার স্ত্রী বলেছিলেন, ” আমরা আপেল ফলাচ্ছি না, আমরা ছেলে বড় করছি।” এটি আপনাকে মনে করিয়ে দেয় যে শিশুরা আমাদের ভবিষ্যতের নাগরিক এবং আমাদের মূল লক্ষ্য তাদের লালন-পালন করা।
৬. দ্রুত স্থান ত্যাগ করুন:
রেগে গেলে চেষ্টা করুন দ্রুত স্থান ত্যাগ করার। এতে করে আপনি নতুন করে ভাবার সময় পাবেন আপনার প্রতিক্রিয়া কি রকম হওয়া উচিত। স্থান ত্যাগ করতেন না পারলে অবস্থার পরিবর্তন করুন যেমন দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়ুন।
৫. এনালাইসিস করুন:
কোন পরিস্থিতিতে আপনি কেন রাগ করছেন বা কেমন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, কীভাবে আপনি অনুভূতিকে প্রকাশ করছেন সেগুলো একটি খাতায় লিখে রাখুন। কীভাবে আপনি আপনার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান সেটিও লিখে ফেলুন এবং বারবার নোটটি পড়ুন।এই পদ্ধতিটি আপনাকে আপনার অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ দেবে, পাশাপাশি নিজের রাগকে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি যোগাবে।
৪. বলার আগে সময় নিন
আমাদের লেফট ব্রেইন ইমোশনাল এবং রাইট ব্রেইন হচ্ছে লজিক্যাল। যে কোন ইমোশন কে লজিক্যাল করার জন্য এটলিস্ট ৫ সেকেন্ড সময় দিন। আপনার প্রতিক্রিয়া হবে এবং রেজাল্ট হবে আপনার অনুকূলে।
৩. তারা কে তা মনে রাখুন
আপনার সন্তানরা কে? তারা মানুষ। প্রতিটি বড় ব্যক্তি এক সময়ে শিশু ছিল। তাদের মধ্যে সম্ভাবনা আছে, যা তারা এখনো উপলব্ধি করে নি।
২. আপনার কাজ কী তা মনে রাখুন
আপনার কাজ হল তাদের ভালোবাসা, কোনো শর্ত ছাড়াই। আমাদের সন্তানরা আমাদের ভালোবাসার পরীক্ষা নেয় এবং আমরা প্রায়শই আমাদের কাজ ভুল বুঝি। আমাদের কাজ তাদের ঘর পরিষ্কার রাখা নয়, বরং তাদের ভালোবাসা, যাই হোক না কেন।
১. আপনি কে তা মনে রাখুন
আপনি কে তা মনে রাখুন। আপনি এই শিশুর বাবা অথবা মা, এবং এটি একটি মহান দায়িত্ব। আপনার সন্তান আপনার হাতে এসেছে, এবং এটি একটি সম্মান এবং সুযোগ।
Sources