আজকের প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে, আমাদের সন্তানদের সফলতার জন্য প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রস্তুতির একটি মূল উপাদান হল তাদের মধ্যে একটি গ্রোথ মাইন্ডসেট গড়ে তোলা। গ্রোথ মাইন্ডসেট হল একটি মানসিকতা যা বিশ্বাস করে যে আমাদের দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা সময়ের সাথে সাথে উন্নত করা যায়। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা আপনাকে শিশুদের মধ্যে গ্রোথ মাইন্ডসেট কীভাবে গড়ে তোলা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও কৌশল প্রদান করব।
১. দৃষ্টিভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে:
গ্রোথ মাইন্ডসেট গড়ে তোলার প্রথম ধাপ হল ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির উপর ফোকাস করা। ডঃ ডেভ বলেন, “এর মূল ধারণা হল যে কোন পরিস্থিতির ইতিবাচক দিকটি খুঁজে বের করা।” এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্যই একটি শক্তিশালী মানসিক পরিবর্তন হতে পারে।ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার কয়েকটি উপায়:
ক) দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক ভাষা ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, “আমি এটা করতে পারি” বা “এটা একটা সুযোগ” ইত্যাদি।
খ) চ্যালেঞ্জগুলোকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখতে শিখুন। কোন সমস্যা দেখা দিলে, “এই সমস্যা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?” এই ধরনের প্রশ্ন করুন।
গ) ছোট ছোট সাফল্যকে উদযাপন করুন। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে সাহায্য করে।
ঘ) নিজের ভুল স্বীকার করুন এবং তা থেকে শেখার গুরুত্ব তুলে ধরুন। এটি শিশুদেরকে দেখায় যে ভুল করা স্বাভাবিক এবং তা থেকে শেখা যায়।
ঙ) প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সাহায্য করে।
ফোকাস বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরনের মেইজ দিয়ে সাজানো প্যাকেজটি নিয়ে দেখতে পারেন।
২. পুরস্কারের মাধ্যমে উৎসাহ প্রদান
জীবনের সব কাজ সবসময় মজার হয় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা যে সেই কাজগুলো করার সুযোগ পাচ্ছি তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকতে পারি। ব্রাউন বলেন, পুরস্কার শিশুদের এমনকি সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজগুলোর প্রতিও ইতিবাচক মনোভাব রাখতে উৎসাহিত করতে পারে।
পুরস্কারের মাধ্যমে উৎসাহ প্রদানের কয়েকটি কৌশল:
ক) ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং তা অর্জন করলে পুরস্কার দিন। উদাহরণস্বরূপ, হোমওয়ার্ক শেষ করার পর কিছুক্ষণ ভিডিও গেম খেলার অনুমতি দেওয়া।
খ) পুরস্কার যেন শিশুর বয়স ও পছন্দের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তা নিশ্চিত করুন।
গ) শুধু ফলাফলের জন্য নয়, প্রচেষ্টার জন্যও পুরস্কার দিন। এটি শিশুদের কঠিন পরিশ্রম করতে উৎসাহিত করে।
ঘ) পুরস্কার যেন খুব ঘন ঘন না হয় তা খেয়াল রাখুন। এটি শিশুদের অভ্যন্তরীণ প্রেরণা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ঙ) পুরস্কার হিসেবে সময় ও অভিজ্ঞতা দেওয়ার কথা ভাবুন। উদাহরণস্বরূপ, একসাথে পার্কে যাওয়া বা একটি নতুন দক্ষতা শেখা।
৩. ফলাফলের পরিবর্তে যাত্রার উপর ফোকাস করা
অনেক সময় আমরা ফলাফল, পারফরম্যান্স এবং নির্দিষ্ট মানদণ্ডে খাপ খাওয়ানোর উপর অত্যধিক জোর দিয়ে থাকি। কিন্তু এর ফলে আমরা প্রায়ই যাত্রার সৌন্দর্য, চেষ্টা করার মূল্য এবং দক্ষতা অর্জনের প্রক্রিয়া হারিয়ে ফেলি। যাত্রার উপর ফোকাস করার কয়েকটি উপায়:
ক) শিশুদের প্রচেষ্টা ও অগ্রগতির প্রশংসা করুন, শুধু চূড়ান্ত ফলাফলের নয়।
খ) শিশুদের সাথে তাদের শেখার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করুন। তারা কী শিখল, কোথায় চ্যালেঞ্জ পেল, কীভাবে সেগুলো মোকাবেলা করল – এসব নিয়ে কথা বলুন।
গ) শিশুদের নিজেদের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে উৎসাহিত করুন। এটি তাদের নিজেদের উন্নতি দেখতে সাহায্য করে।
ঘ) লক্ষ্যের দিকে যাত্রাকে ছোট ছোট ধাপে ভাগ করুন। এটি প্রতিটি ধাপের গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করে।
ঙ) শিশুদের বিভিন্ন কৌশল ও পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখতে উৎসাহিত করুন। এটি তাদের শেখার প্রক্রিয়াকে আরও সমৃদ্ধ করে।
৪. ব্যর্থতাকে স্বাগত জানানো
গ্রোথ মাইন্ডসেট আমাদেরকে ব্যর্থতাকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শেখায়। এটি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে উৎসাহিত করে, “এবার যদি ভালো করতে না পেরে থাকি, তবে পরের বার কী করতে পারি যাতে ফলাফল পরিবর্তন করতে পারি?”
ব্যর্থতাকে স্বাগত জানানোর কয়েকটি উপায়:
ক) ব্যর্থতাকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখতে শেখান। প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে কী শেখা গেল তা নিয়ে আলোচনা করুন।
খ) “এখনও নয়” শব্দটির শক্তি ব্যবহার করুন। “আমি এটা পারি না” এর পরিবর্তে “আমি এটা এখনও পারি না” বলতে উৎসাহিত করুন।
গ) নিজের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন এবং আপনি কীভাবে তা থেকে শিখেছেন তা বলুন।
ঘ) শিশুদের বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে দেখতে উৎসাহিত করুন। একটি পদ্ধতি কাজ না করলে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করতে বলুন।
ঙ) ব্যর্থতার পর আবার চেষ্টা করার গুরুত্ব জোর দিন। এটি দৃঢ়তা ও সহনশীলতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
৫. কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস গড়ে তোলা
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ একটি অভ্যাস যা প্রতিদিন চর্চা করতে হয়। এটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে এবং গ্রোথ মাইন্ডসেট বজায় রাখতে সাহায্য করে।কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস গড়ে তোলার কয়েকটি উপায়:
ক) একটি কৃতজ্ঞতা জার্নাল রাখুন। প্রতিদিন তিনটি জিনিস লিখুন যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ।
খ) পরিবারের সাথে কৃতজ্ঞতার খেলা খেলুন। উদাহরণস্বরূপ, ডিনারের সময় প্রত্যেকে একটি করে জিনিস বলুন যার জন্য তারা কৃতজ্ঞ।
গ) প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বের করুন।
ঘ) শিশুদের সাথে কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করুন এবং তাদের নিজস্ব কৃতজ্ঞতা তালিকা তৈরি করতে উৎসাহিত করুন।
ঙ) অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার গুরুত্ব শেখান। এটি সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করতে সাহায্য করে।
৬. প্রশংসার ধরন পরিবর্তন করা
শিশুদের প্রশংসা করার সময় আমরা প্রায়ই তাদের জন্মগত গুণাবলী বা প্রতিভার প্রশংসা করি। কিন্তু গ্রোথ মাইন্ডসেট গড়ে তুলা
৭. লেখার মাধ্যমে শেখা
জার্নালিং প্রক্রিয়াটি এবং আপনি কী শিখেছেন তা লেখার মাধ্যমে গ্রোথ মাইন্ডসেটের গুণাবলি উন্নয়ন করা যেতে পারে।
গ্রোথ মাইন্ডসেট গড়ে তোলার জন্য এই সহজ কৌশলগুলি ব্যবহার করে আপনি আপনার সন্তানদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেন।
আপনার অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শগুলো শেয়ার করুন মন্তব্যে। আশা করি এই ব্লগটি আপনার কাজে আসবে!
Sources:
এই প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে, আমাদের সন্তানদের সফলতার জন্য প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রস্তুতির একটি মূল উপাদান হল তাদের মধ্যে একটি গ্রোথ মাইন্ডসেট গড়ে তোলা। গ্রোথ মাইন্ডসেট হল একটি মানসিকতা যা বিশ্বাস করে যে আমাদের দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা সময়ের সাথে সাথে উন্নত করা যায়। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা আপনাকে শিশুদের মধ্যে গ্রোথ মাইন্ডসেট কীভাবে গড়ে তোলা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও কৌশল প্রদান করব।